হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, গাঁজা, পশ্চিমতীর, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরান, ইরাক- সর্বত্রই উত্তেজনার আগুন। তবে কি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ আসন্ন? সেই প্রশ্নই নতুন করে ভাবাচ্ছে বিশ্বকে। ইরান ও ইসরাইলের হামলা পাল্টা হামলায় উত্তেজনায় ফুটছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য। শনিবার ভোরে ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরাইল। তেহরানে ইসরাইলি হামলা নিয়ে সরব হলেন মুসলিম বিশ্বের দেশগুলি। ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা নিয়ে তীব্র নিন্দা জানাল সৌদি আরব, কাতার, মিশর, তুরুস্ক, জর্ডানসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ। যদিও এই প্রথম ইরানকে প্রকাশ্যে সমর্থন করল সৌদি আরব।
সৌদি আরব: ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সৌদি বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরাইলি হামলাকে ‘সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’। সরাসরি ইসরাইলের নাম উল্লেখ না করেই সৌদি আরব সব পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ থাকার বার্তা দিয়েছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উত্তেজনা হ্রাস এবং আঞ্চলিক সঙ্ঘাতের অবসানের জন্য পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
তুরুস্ক: দেশটির বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “যে ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে, পশ্চিম তীর দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং লেবাননে প্রতিদিন বেসামরিক মানুষ হত্যা করছে, তারা এখন এই হামলার মাধ্যমে আমাদের অঞ্চলকে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাড় করিয়েছে। আমরা আমাদের অঞ্চলে আর কোনো যুদ্ধ, সহিংসতা বা অরাজকতা চাই না।” আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আইন প্রয়োগ করে নেতানিয়াহুর সরকারকে বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আঙ্কারা।
মিশর: এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে এমন সব কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায় মিশর। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মিশর তার অবস্থানের ওপর জোর দিয়ে বলছে, গাজা উপত্যকায় দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো উচিত এবং জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া। কারণ উত্তেজনা প্রশমনের একমাত্র উপায় এটি।”
কাতার: দেশটির বিদেশমন্ত্রক বলেছে, ইসরাইলের এই হামলা “ইরানের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন”। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা গভীর উদ্বেগের। সব পক্ষকে সংযত থেকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি আহ্বান জানাচ্ছি। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে এমন যেকোনো কিছু বিষয় এড়ানো উচিত।”
ইরাক: দেশটির সরকারের মুখপাত্র বাসিম আলাওয়াদি ইসরাইলি কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “দখলদার ইহুদিবাদী সত্তা তার আগ্রাসী নীতি অব্যাহত রেখেছে এবং ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে নির্লজ্জ হামলা চালিয়ে সংঘাতকে আরও বিস্তৃত করছে।”
জর্ডান: দেশটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “গাজা, পশ্চিম তীর ও লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে।”
কুয়েত: ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়ে দেশটির বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, “রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন এবং এই অঞ্চলের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করার মাধ্যমে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী যে বিশৃঙ্খলার নীতি অনুসরণ করছে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।”
হামাস: ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি বলেছে, তারা ইরানের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী আগ্রাসনের নিন্দা জানাচ্ছে। হামাস বলেছে, “আমরা এই হামলাকে ইরানের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এই অঞ্চলের জনগণের নিরাপত্তাকে লক্ষ্যবস্তু করে উত্তেজনা বৃদ্ধি বলে মনে করি। এই আগ্রাসনের জন্য দখলদার ইসরাইলকে সমর্থনকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি দায়ী।”
পাকিস্তান: ইরানের ‘সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা’র বিরুদ্ধে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর হামলা ‘জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেছে ইসলামাবাদ। দেশটির বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “এই হামলা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং এই অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ ভাবে ইসরাইল দায়ী।”
ওমান: এই হামলা ইরানের সার্বভৌমত্বের ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে দেশটির বিদেশ মন্ত্রণালয় বলেছে, “ইসরাইলি বিমান হামলা সহিংসতাকে উসকে দিয়েছে। উত্তেজনা প্রশমন ও শান্তি ফেরানোর চেষ্টাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।”
মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়া অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ এবং সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে। দেশটি বলেছে, “মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ইসরাইলের অব্যাহত হামলা এই অঞ্চলকে বৃহত্তর যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাড় করিয়েছে।” এই হামলাকে আঞ্চলিক নিরাপত্তায় মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে বলে অভিহিত করেছে কুয়ালালামপুর।